1.3 স্থান ও কাল (Space and time)

বিজ্ঞান তথা পদার্থবিজ্ঞানে স্থান ও কাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। কোনো ঘটনা বর্ণনা করতে আমাদের স্থান ও কালের প্রয়োজন হয়। ঘটনাটি কোথায় ঘটেছে এবং কখন ঘটেছে -এটা না জানলে আমরা ঘটনাটি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাব না। কোনো বস্তুর অবস্থান কোথায় এবং বস্তুটি কতটা জায়গা দখল করে তা বুঝতে স্থানের ধারণা প্রাচীন কাল থেকে চলে আসছে। কোন ঘটনা আগে ঘটেছে এবং কোন ঘটনা পরে ঘটেছে এবং কতক্ষণ ধরে ঘটেছে তা বুঝতে সময়ের ধারণা প্রয়োজন।

ইউক্লিডের ধারণা :
স্থানের জ্যামিতিক ধারণা প্রথম উপস্থাপনা করেন ইউক্লিড। আমাদের চারপাশে যা আছে সবই স্থান।

গ্যালিলিও-এর ধারণা :
গ্যালিলিও তাঁর সৃতিবিদ্যায় স্থান ও কালকে ব্যবহার করেছেন তার গতি ও ত্বরণের সূত্রে। এর ফলে পদার্থবিজ্ঞানে স্থান ও কাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাশি হিসেবে গাণিতিক সমীকরণে প্রবেশ করেছে।

নিউটনের ধারণা :
স্থান ও কালের ধারণা আরো স্পষ্ট ও পরিমাণগত রূপ গ্রহণ করেছে নিউটনের বলবিদ্যার মাধ্যমে। নিউটনীয় বা চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞানে স্থান হচ্ছে ত্রিমাত্রিক এক বিস্তৃতি। স্থানের কোনো শুরু বা শেষ নেই। অসীম এর বিস্তৃতি। স্থানকে অতিক্ষুদ্র অংশে ভাগ করা যায় অর্থাৎ স্থান নিরবচ্ছিন্ন। স্থান সমসত্ত্ব অর্থাৎ স্থানের যে কোনো এলাকা অন্য এলাকা থেকে অভিন্ন। স্থান নিরপেক্ষ। স্থানের মধ্যে সব ঘটনা ঘটে এবং স্থানের বিস্তৃতির মধ্যেই সমস্ত বস্তুর অবস্থান কিন্তু স্থান কোনো বস্তু বা ঘটনা দ্বারা প্রভাবিত হয় না। স্থান যেমন বস্তু ও ঘটনা নিরপেক্ষ তেমনই সময় নিরপেক্ষ, ফলে কালের প্রবাহ স্থানকে বদলাতে পারে না।

নিউটনের ধারণা অনুসারে সময় বা কাল নিজস্ব ধারায় প্রবাহিত হবে। কোনো বস্তু বা ঘটনার দ্বারা এই কালিক প্রবাহ প্রবাহিত হয় না। সময়ের কোনো শুরু বা শেষ নেই। সময়কে অতিক্ষুদ্র অংশে ভাগ করা যায়। অর্থাৎ এর প্রবাহ নিরবচ্ছিন্ন। সময়ের যে কোনো অংশ অন্য অংশের সমরূপ। এর ফলে কোনো পরীক্ষা যখনই সম্পাদন করা হোক তা সময় নির্বাচনের উপর নির্ভর করে না। সময় স্থান নিরপেক্ষ।

নিউটনীয় স্থান কালের ধারণায় আমাদের এই মহাবিশ্ব ত্রিমাত্রিক স্থান ও একমাত্রিক সময় নিয়ে গঠিত। যেখানে সমস্ত ঘটনা ঘটছে ও সমস্ত বস্তু ধারণ করা আছে।

আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানে নিউটনীয় স্থান কালের ধারণার পরিবর্তন এসেছে। এর মূলে রয়েছে আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব এবং প্ল্যাঙ্কের কোয়ান্টাম তত্ত্ব।

 

Leave a comment